গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় গ্রহণের দুই বছর পূর্তিতে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু প্রত্যাবাসনের উদ্যোগটি কার্যকর হওয়ার সব কটি মৌলিক লক্ষণ অনুপস্থিত ছিল। তিন দিন ধরে প্রায় দেড় হাজার লোকের সাক্ষাৎকার নেওয়ার পরও প্রত্যাবাসন যে শুরু হলো না, তাতে বিস্ময় নেই। তবে এখন চ্যালেঞ্জ হলো মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যাবাসন আলোচনায় নাগরিকত্বের বিষয়টি যুক্ত করা। জাতিসংঘকে সাফ বলতে হবে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব প্রশ্নের দ্রুত ফয়সালা করতে হবে। আগে নাগরিকত্বের মীমাংসা, এরপরে প্রত্যাবাসনের প্রশ্ন।
বাংলাদেশি কর্মকর্তারা বলছেন, ২২ আগস্ট রোহিঙ্গাদের প্রথম ব্যাচটিকে পাঠাতে তাঁরা প্রস্তুত ছিলেন। তবে এই প্রত্যাবাসন নিয়ে বিশ্বসম্প্রদায় এবং বিশ্ব গণমাধ্যমের একদম উচিত হবে না কোনোভাবেই উচ্ছ্বাসপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা। কারণ, এই প্রত্যাবাসন কোনো প্রকৃত প্রত্যাবাসন উদ্যোগ নয় বলেই প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশকে কেন মিয়ানমারের সঙ্গে গলা মেলাতে হচ্ছে, বাংলাদেশের সেই কৌশলগত সংকটও তাদের বিবেচনায় নিতে হবে। আমরা এ কথা দৃঢ়তার সঙ্গে পুনর্ব্যক্ত করতে চাই যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো নাগরিকত্ব। বাংলাদেশের শরণার্থীশিবির থেকে মিয়ানমারের শরণার্থীশিবির, যেখানে বাড়তি যুক্ত হতে পারে নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চয়তা, সেই পরিবেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থাকে ‘প্রত্যাবাসন’ বলা যায় না। রোহিঙ্গাদের জন্য এটা নিষ্ঠুর পরিহাস যে তাদের দাবার ‘বোড়ে’ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। নাগরিকের মর্যাদায় মিয়ানমার তাদের নেবে না, কিন্তু মিয়ানমার ভাবছে, আন্তর্জাতিক চাপ প্রশমনের জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে, আর স্বাগতিক দেশ হয়ে বাংলাদেশ সব জেনেবুঝেও মিয়ানমারের পদক্ষেপের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিতে হবে। এর আগে মিয়ানমার প্রত্যাবাসন শুরু করতে না পারার জন্য ধূর্ততার সঙ্গে বাংলাদেশকে অভিযুক্ত করেছিল। আবার উদ্বাস্তু প্রত্যাবাসনে উদ্বাস্তু হাইকমিশনের ব্যাপক কর্মযজ্ঞের ফলাফল যে একেবারে শূন্য নয়, সেটা প্রদর্শন করার একটি বিষয় তাদেরও আছে।