আজ ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস। ১৯৮৭ সালের এই দিনে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে প্রতিবাদে অংশ নেন নূর হোসেন।
সেদিন জনতার মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালানো হলে নূর হোসেন শহীদ হন ঢাকার রাজপথে। তাঁর সেই আত্মত্যাগের পথ ধরেই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়, স্বৈরাচারীর পতন হয়। কিন্তু দীর্ঘ ২৩ বছরেও নূর হোসেনের পৈত্রিক ভিটায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তাঁর স্মৃতি রক্ষার। তাই আজ দিবসটিতে এলাকাবাসীর দাবি, পৈত্রিক ভিটায় নূর হোসেনের স্মৃতি রক্ষার ব্যবস্থা করা হোক।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে জীবন দেওয়া শহীদ নূর হোসেনের পৈত্রিক ভিটা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার নিভৃত পল্লী সাপলেজা ইউনিয়নের ঝাঁটিবুনীয়া গ্রামে। সেখানে জ্বরাজীর্ণ বাড়িতে এখন বসবাস করছেন তাঁর বংশধররা।
এলাকাবাসীর আক্ষেপ, পৈত্রিক ভিটায় তাঁর স্মৃতি সুরক্ষায় আজো গড়ে ওঠেনি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। মঠবাড়িয়া শহরে কোনো চত্বর কিংবা ম্যুরালও নির্মিত হয়নি। প্রতিবছর নূর হোসেনের গ্রামের বাড়িতে একটু মিলাদ আলোচনাসভা ছাড়া আর কোনো কর্মসূচিও পালিত হয় না।
নূর হোসেনের পোর্ট্রেট
স্থানীয় সূত্রের খবর অনুযায়ী, গ্রামের স্থানীয় কিছু তরুণ মিলে শহীদ নূর হোসেন চত্বর নামে তরুণদের একটি সামজিক প্লাটফর্ম, গ্রামে গড়ে ওঠা শহীদ নূর হোসেন স্মৃতি পরিষদ ও জাগো লক্ষ নূর হোসেন নামের একটি সংগঠন মিলে যৌথভাবে এবার দাবি তুলেছে মঠবাড়িয়া পৌরশহরের থানাপাড়া তিন রাস্তার মোড়ে শহীদ নূর হোসেন চত্বর, নূর হোসেনের ম্যুরাল, তাঁর নামে এবতেদায়ী মাদ্রাসারটির উন্নয়ন, গ্রামের বাজারটির নাম নূরের হাট আর তাঁর পৈত্রিক ভিটার উন্নয়ন।
নূর হোসেনের পৈত্রিক ভিটায় বর্তমানে বসবাস করছেন তাঁর চাচাত ভাই রুহুল আমীন হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই গণতন্ত্রের জন্যই জীবন দিছে। কিন্তু তাঁর পৈত্রিক ভিটায় শহীদ ভাইয়ের স্মৃতি রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা আজো হইল না।’
শহীদ নূর হোসেন স্মৃতি পরিষদ-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নূরুল আমীন রাসেল বলেন, ‘আমরা গর্বিত যে শহীদ নূর হোসেন আমার আপন জনপদের কৃতি সন্তান। তারুণ্যের অহংকার। অধিকার আদায়ে যুগে যুগে এমন সাহসী তরুণরাই বুকের রক্ত দিয়েছে। শহীদ নূর হোসেনের স্মৃতিবিজড়িত মঠবাড়িয়া স্মৃতি রক্ষার দাবি সকল স্তরের মানুষের।’
মঠবাড়িয়ার বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী চঞ্চল কর্মকার বলেন, ‘শহীদ নূর হোসেন আমাদের গর্বেও তারম্নণ্য। তাঁর পৈত্রিক ভিটায় একটি স্মৃতি সত্মম্ভ নির্মাণ, একটি পাঠাগার নির্মাণ, মঠবাড়িয়া শহরে শহীদ নূর হোসেন চত্বর ও ম্যুরাল নির্মাণের দাবি জানাই।’
এদিকে, শহীদ নূর হোসেনের পৈত্রিক নিবাস পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ঝাঁটিবুনীয়া গ্রামে শহীদ নূর হোসেন স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে নান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে নূর হোসেনের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, নূর হোসেনের স্মৃতি রক্ষার দাবিতে শোকযাত্রা, তাঁর পৈত্রিক ভিটায় ফুল ও ফলদ গাছের চারা রোপণ ও মিলাদ মাহফিল।
source