Today bangla news : চট্টগ্রামের বিআইটিআইডিতে গত ২৪ এপ্রিল সাতকানিয়ার এক স্বাস্থ্য পরিদর্শকসহ তাঁর পরিবারের তিনজনের নমুনা পরীক্ষার জন্য দেওয়া হয়। এর মধ্যে ওই পরিদর্শক তাঁর কর্মস্থলে অনেকের সংস্পর্শেও আসেন। গত শুক্রবার নিশ্চিত হওয়া যায়, তিনি করোনার রোগী। পরদিন শনিবার সাতকানিয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরও অন্তত ১৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ওই স্বাস্থ্য পরিদর্শকের মতো অনেকে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা না করে উপসর্গ নিয়ে ঘুরছেন। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। নমুনা পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রতা ও সচেতনতার অভাব এ জন্য দায়ী। এ ছাড়া রোগীকে সামাজিকভাবে চাপে রাখা, চিকিৎসকদের সুরক্ষা সরঞ্জামের সংকটসহ নানা সমস্যায় চলছে চট্টগ্রামে করোনা মোকাবিলা। চট্টগ্রাম জেলায় গত শনিবার পর্যন্ত ৮১ জন করোনা রোগী শনাক্তের খবর পাওয়া যায়। এর মধ্যে ২০ জন সুস্থ হন। মারা যান এক শিশুসহ ছয়জন।
চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেস) গত ২৬ মার্চ কোভিড-১৯ পরীক্ষা শুরু হয়। ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্যে গত ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা পরীক্ষা শুরু করা হয়। তারপরও নমুনা জট লেগে আছে। গত শনিবার পর্যন্ত এই দুই স্থানে ৩ হাজার ৮৫১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এক সপ্তাহ আগের নমুনা এখনো পরীক্ষা করা যায়নি।
নমুনা নেওয়ার সময় হোম আইসোলেশনে থাকতে বলা হলেও অনেকে তা মানেন না। গত শুক্রবার নগরের রাহাত্তারপুল এলাকার এক নারীর নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ আসে। কিন্তু ওই ঠিকানায় গিয়ে শুক্রবার তাঁকে পুলিশ পায়নি। পরদিন দেখা যায়, তিনি জামালখান এলাকার এক বাসায়। পরে তাঁকে হাসপাতালের আইসোলেশনে নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে বিআইটিআইডির পরীক্ষাগারের দায়িত্বে নিয়োজিত সহযোগী অধ্যাপক শাকিল আহমেদ বলেন, ‘দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষা করতে হয়। কর্মীর সংকটও রয়েছে। প্রায় দুই শিফটে কাজ করে যাচ্ছি। এখনো হাজারের মতো নমুনা পরীক্ষার অপেক্ষায় রয়েছে।’
অভিযোগ আছে, অনেকে নমুনা দিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়ান। এর ফলে অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। শুক্রবার সাতকানিয়ার স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা পজিটিভ ধরা পড়ার আগে তিনি কর্মস্থলে যান। সাতকানিয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা আবদুল মজিদ ওসমানি বলেন, তাঁর কারণে এখন সবাই ঝুঁকিতে। তাই পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। সচেতন হলে এটা হতো না।
জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরীক্ষা বাড়াতে হবে, দ্রুততর করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বিষয়টির ওপর জোর দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের কর্মীসহ নানা সংকট রয়েছে। সামাজিক সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।’
নমুনাজটের কারণে পরীক্ষার ক্ষেত্রে এখন অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন রোগী, মৃত রোগী, করোনা রোগীর সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তি এবং চিকিৎসক ও প্রশাসনে দায়িত্ব পালনকারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নমুনা পরীক্ষা করা হবে।
চিকিৎসায় সামাজিক বাধা
সবশেষ হিসাব অনুযায়ী ৫৫ জন আইসোলেশনে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে জেনারেল হাসপাতালে ৪৬ জন। বাকিরা বিআইটিআইডি ও ফিল্ড হাসপাতালে। তাঁদের অনেকেই বাড়িতে চিকিৎসা নিতে পারতেন। জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক অসীম কুমার নাথ বলেন, ১৩-১৪ জন ছাড়া বাকিরা বাড়িতেই থাকতে পারতেন। হাসপাতালে সবাই আসতে চান না। অনেকের আসার দরকারও নেই। কিন্তু স্থানীয় লোকজন পাড়া-প্রতিবেশী করোনা শনাক্ত হলেই বাড়িতে থাকতে দিচ্ছেন না। এ রকম হলে ভবিষ্যতে হাসপাতালে জায়গা দেওয়া মুশকিল হয়ে যাবে।
গত বৃহস্পতিবার বায়েজিদ এলাকায় করোনা পজিটিভ হওয়ার পর এক ব্যক্তিকে স্থানীয় লোকজন জোর করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
এ ছাড়া সাতকানিয়ায় ২৬ এপ্রিল ছয়জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। সাংসদ ও এলাকাবাসীর চাপে তাঁদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জনকে সাংসদ নিজে ফোন করে রোগী ঘরে না রাখার জন্য বলেন। এক দিন পর তাঁদের চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক কারণে বাড়িতে চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না। লোকজন জোর করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সাতকানিয়ার যে ছয় রোগী ভর্তি হয়েছেন, তাঁরা বাড়িতেই চিকিৎসা নিতে পারতেন। স্থানীয়দের চাপ ছিল। সাংসদও বিষয়টা নিয়ে কথা বলেছেন।
চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতালে ১০০ শয্যার আইসোলেশন শয্যা রয়েছে। এর বাইরে বিআইটিআইডিতে রয়েছে ৫০ শয্যা।
বিভাগের চিত্র
চট্টগ্রাম বিভাগে শুক্রবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩২৬। এর মধ্যে মারা গেছে ১৭ জন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত কুমিল্লায়, ৮০ জন। এরপর চট্টগ্রামে ৭৮, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরে যথাক্রমে ৪৫ ও ৪৩ জন।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনীর নমুনা পরীক্ষা চলছে। কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে। সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার নমুনা কক্সবাজারে দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা চলছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ল্যাব চালু হলে মহানগরের নমুনা সেখানে পরীক্ষা হবে। তখন বিআইটিআইডিতে শুধু উপজেলার নমুনা পরীক্ষা করা হবে বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এখন চট্টগ্রাম ও কয়েকটি জেলার নমুনা বিআইটিআইডিতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন :কানাডার ইতিহাসে প্রথম রমজানে মাইকে আজানের অনুমতি